ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আপনারা হয়তোবা অনেকেই জানেন না ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।অনেকেই এই বিষয়টি খোঁজা খুঁজি করে সঠিক তথ্য পাননি।তাই আমি আজকে আমার এই আর্টিকেলটিতে উক্ত বিষয়ে সম্পর্কে আলোচনা করব।এছাড়াও আমি আলোচনা করব মানুষের অন্ত্রে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়ার নাম কি?এই সম্পর্কে আশা করছি আমার এই আর্টিকেলটি আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
আমার এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনারা আপনাদের সকল প্রশ্নোত্তর গুলো পেয়ে যাবেন।আমি আমার আর্টিকেলটিতে উপরোক্ত বিষয়গুলি ছাড়াও আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে আলোচনা করেছি।তার মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য আশা করছি ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা ছাড়াও আরো অনেক বিষয় সম্পর্কে আপনারা জানতে পারবেন এবং সেগুলো জেনে উপকৃত হবেন।
মানুষের অন্ত্রে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়ার নাম কি
ব্যাকটেরিয়া আমাদের নানাভাবে ক্ষতি করে থাকে।এটি ক্ষতিকর অনুজীব।আমরা সাধারণত এটাকেই সত্যি ভেবে থাকি।তবে ব্যাকটেরিয়া শুধু আমাদের ক্ষতি সাধনই করে না বরং আমাদের উপকারও করে থাকে।মানুষের অন্ত্রের ভেতর ব্যাকটেরিয়া বাস করে বা ব্যাকটেরিয়া থাকে।এই ব্যাকটেরিয়া আমাদের জন্য ভালো খারাপ দুটোই হয়ে থাকে।
সুস্থ ও সবল ভাবে আমাদের পরিপাকতন্ত্রে খাবার পরিপাক হতে সাহায্য করে।অন্ত্রের বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া গুলো এই ব্যাকটেরিয়া গুলো আমাদের অন্ত্রকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা করে এবং আমাদের অন্ত্র প্রটেক্ট করে।যেমন: যে সকল ব্যাকটেরিয়া আমাদের অন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে বা রোগ সৃষ্টি করে।সেগুলোর হাত থেক রক্ষা করতে আমাদের অন্ত্রের অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়া বাস করে।
সেগুলোর মধ্যে ভালো ব্যাকটেরিয়াল রয়েছে।আবার খারাপ ব্যাকটেরিয়াও রয়েছে।নিচে মানুষের অন্ত্রে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়ার নাম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো মানুষের অন্ত্রে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া।গুলোর মধ্যে একটি হল এসকেরিকা কলি যাকে ই-কলি ব্যাকটেরিয়া বলা হয়ব্যাকটেরিয়া হল একধরনের অবনুজীব প্রাণী।
ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য
পৃথিবীতে অনেক ধরনের অণুজীব বাস করে।তাদের মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া,নিলাভ সবুজ শৈবাল, অ্যামিবা, ডায়াটম, পেনিসিলিয়াম, ইস্ট, মাশরুম ইত্যাদি।এদের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া অন্যতম।আমরা অনেকেই ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানি না আবার অনেকেই জানে।ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য সমূহ ব্যাখ্যা করা হলো।সকল অনুজীবকেই মাইক্রোস্কোপ অথবা অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা দেখা যায়।
ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রেও তাই।ব্যাকটেরিয়াকে দেখতে হলে মাইক্রোস্কোপ বা অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখতে হয়।খালি চোখে কোন অণুজীবকেই দেখা সম্ভব নয়।তাই ব্যাকটেরিয়াকেও খালি চোখে দেখা যায় না।কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া আমাদের জন্য বা পরিবেশের জন্য উপকারী হয়ে থাকে আবার কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া আমাদের জন্য অপকারী ও হয়ে থাকে।ব্যাকটেরিয়া হলো এককোষী অনুজীব।ব্যাকটেরিয়া ফিলামেন্টাস এবং কলোনিয়াল প্রজাতির হয়ে থাকে।
ফিলামেন্টাস মানে হলো একটি পর একটি কোষ লম্বালম্বি ভাবে যুক্ত হয়ে ফিলামেন্ট গঠন করে।ব্যাকটেরিয়াদের কোষে ক্রোমাটিন বস্তু থাকে।কিন্তু নিউক্লিওলাস ও নিউক্লিয়ার পর্দা থাকে না।ব্যাকটেরিয়াদের কোষে প্লাস্টিড, মাইটোকনড্রিয়া, এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা ইত্যাদি থাকে না।তবে কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়ার কোষে রাইবোজোম থাকে।ব্যাকটেরিয়ার কোষ বিভাজন দ্বিবিভাজন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়।এরা প্রধানত শোষণ পদ্ধতিতে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে।
তবে কোন কোন ব্যাকটেরিয়ারা ফটোসিন্থেসিস বা সালোকসংশ্লেষণ পদ্ধতিতে খাদ্য প্রস্তুতও করে থাকে।ব্যাকটেরিয়া অনেক ধরনের আকার আকৃতি ধারণ করতে পারে।যেমন: গোলাকার, লম্বাকার এবং ত্রিভুজাকার হয়ে থাকে।
ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
ব্যাকটেরিয়া আমাদের বিভিন্ন সাহায্য করে থাকে আবার বিভিন্নভাবে ক্ষতি প্রদান করে থাকে।আমরা জানি সব কিছুরই যেমন উপকারিতা রয়েছে অপকারিতাও রয়েছে।এখন আমি আলোচনা করব ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।আমাদের সকলেরই এ বিষয়টি জানা প্রয়োজন।কারণ ব্যাকটেরিয়াও আমাদের উপকার করে থাকে এবং অপকারও করে থাকে তাহলে চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা
- বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে যে সকল রোগ হয়।যেমন: কলেরা.যক্ষা,টাইফয়েড ইত্যাদি।সকল রোগের জন্য টিকা তৈরি করা হয় ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে।
- ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, ধনুষ্টংকার ইত্যাদি রোগের ভ্যাকসিন বাটিকা তৈরি করা হয় বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে।
- ব্যাকটেরিয়াকে প্রকৃতির ঝাড়ুদার বলা হয়ে থাকে কারণ এটি উদ্ভিদ পশু পাখি প্রাণীর মৃতদেহকে সাহায্য করে।
- ব্যাকটেরিয়া জীবদেহের অন্ত্রে বাস করে এবং বিভিন্ন খাবার পরিপাকে সহায়তা করে।
- টেস্টিং সল্ট বা খাবার লবণ তৈরি করতেও ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়।
- ডায়াবেটিস রোগীর ঔষধ তৈরি করতে ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার হয়।
- বিভিন্ন ধরনের দই তৈরি করতেও ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয়।
- এছাড়াও দুধ থেকে মাখন পনির ছানা ঘোল ইত্যাদি তৈরি করতেও ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- ব্যাকটেরিয়া আমাদের দেহে যক্ষা নিউমোনিয়া আমাশয় কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি করে।
- এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া পানিকে একদম দূষণ করে ফেলে।যেগুলো আমাদের জন্য পান করা একদমই অনুপযোগী।
- ব্যাকটেরিয়া আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন জিনিসের ক্ষতি করে যেমন কাপড়চোপড় আসবাবপত্র লোহা ইত্যাদি।
- এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যেগুলো বিমানের জ্বালা নিতে উৎপন্ন হয় যা বিমানের জন্য ক্ষতির দিক।
- ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য কে পচিয়ে ফেলে যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর।
ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগ গুলি কি কি?
ব্যাকটেরিয়া অনুজীবটি আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে প্রতিরোধ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।কিন্তু কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যেগুলো আমাদের শরীরে রোগ সৃষ্টি করে।যে সকল ব্যাকটেরিয়া গুলো রোগ সৃষ্টি করে তাদেরকে বলা হয় প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া।এই সকল ব্যাকটেরিয়া গুলো এন্ডোটক্সিন এবং এক্সেোটক্সিননামক পদার্থ দিয়ে রোগ সৃষ্টি করে।ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগ সম্পর্কে জানা অত্যন্ত প্রয়োজন।ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগগুলো হল: যক্ষা, কলেরা, আমাশয়, মূত্রনালীর ইনফেকশন, নিউমনিয়া, মেনিনজাইটিস নেক্রোটাইজিং ফ্যাসাইটিস, বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন, ব্রংকাইটিস ইত্যাদি।এগুলোর মধ্যে কিছু রোগ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
যক্ষ্মা: যক্ষা হলো একটি ফুসফুসের রোগ।যক্ষা একটি পরিচিত বায়ুবাহিত সংক্রামক রোগ।এই রোগটি সাধারণত মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়ে থাকে। সঠিকভাবে যক্ষা রোগের চিকিৎসা না হলে এতে প্রাণঘাতীর কারণও হতে পারে।তবে যক্ষ্মার জীবাণুযুক্ত ত্বকের ক্ষতের সংস্পর্শে এলে কিংবা সংক্রমিত গরুর দুধ খেয়েও কেউ কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
যারা অধিক পরিশ্রম করে দুর্বল স্যাঁতস্যাঁতে বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করে,অপুষ্টিতে ভোগে অথবা যক্ষা রোগের সাথে বসবাস করে তারা এই ধরনের রোগের সহজে আক্রান্ত হতে পারে।যক্ষা, হাড়, ফুসফুস, অন্ত্র এরকম দেহের প্রায় যে কোন স্থানে হতে পারে।যক্ষা রোগের ঔষধ হিসেবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
নিউমোনিয়া: নিউমোনিয়া একটি ফুসীয় রোগ।এটি সাধারণত নিউমোকক্কাস নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়ে থাকে।এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকের আক্রমণে নিউমোনিয়া হতে পারে।এই রোগটি শিশু বা বয়স্ক যেকোনো মানুষকেই আক্রান্ত করে।
আমাশয়: আমাশয় সাধারণত শিগেলা বংশের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমণ হয়ে থাকে।এটি বিশেষ করে পচা, বাঁশি খাবার এবং পানি দ্বারা ছড়ায়।আবার যারা টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে হাত ধৌত করে না তাদের মাধ্যমেও আমার সহায় রোগটি ছড়াতে পারে।
শেষ মন্তব্য
সবশেষে বলা যায় যে ব্যাকটেরিয়া আমাদের জন্য এবং পরিবেশের জন্য উপকারী এবং অপকারীও। কারণ ব্যাকটেরিয়া আমাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করে এবং বিভিন্নভাবে ক্ষতি প্রদান করে থাকে।আমি আমার বক্তব্যের শেষ প্রান্তে এসে এটাই বলতে চাই আমার আজকের ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত আর্টিকেলটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লেগে থাকলে বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজন দের সাথে শেয়ার করবেন।আশা করছি আমার এই আর্টিকেলটির পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন এবং ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে অনেক তথ্য পেয়েছেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url