অতিরিক্ত ঘুমালে কি ক্ষতি হয়

অতিরিক্ত ঘুমালে কি ক্ষতি হয়? এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। যা আমাদের জন্য জানা প্রয়োজন। আপনারা অনেকেই হয়তো এই সম্পর্কে অনেক জায়গাতে খোঁজাখুঁজি করে সঠিক তথ্য পান নি। তাই আমি আমার আজকের আর্টিকেলটি উক্ত বিষয়টি নিয়ে শুরু করেছি। 
এটি ছাড়াও আমার আর্টিকেলটিতে আপনাদের প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যেমন: অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায় ইত্যাদি। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাবেন এবং আশা করছি কিছুটা উপকৃত হবেন।

অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায়

অতিরিক্ত ঘুম আসা আমরা প্রায় অনেকেই এই সমস্যাটিতে ভুগছি। অতিরিক্ত পরিমাণে ঘুম না আসাও যেমন আমাদের জন্য ক্ষতিকর। ঠিক তেমনি অতিরিক্ত ঘুমও আমাদের জন্য খুব বেশি একটা ভালো নয়। তাই আমাদের অবশ্যই জানতে হবে, কিভাবে অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়? আপনাদেরকে উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আমি আমার অতিরিক্ত ঘুমালে কি ক্ষতি হয়? 

আরো পড়ুন: রাত জাগলে কি ব্রণ হয়?

সম্পর্কিত আর্টিকেলটিতে অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে আলোচনা করছি। অতিরিক্ত ঘুম আসার কারণ অনেক ধরনের হয়ে থাকে। যেমন: সময় মত এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ না ঘুমানোর কারণে হতে পারে, শরীর দুর্বল হওয়ার কারণেও অতিরিক্ত ঘুম আসা সম্ভবনা থাকে। শরীর রোগাক্রান্ত হওয়ার ফলে অতিরিক্ত ঘুম এসে থাকে। অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের কারণেও অতিরিক্ত ঘুম পায়। 

আবার অতিরিক্ত মানসিক চাপ থাকার কারণেও অতিরিক্ত ঘুম পেয়ে থাকে। এই অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তি পেতে নিচের কথাগুলো মেনে চলা প্রয়োজন।
  1. প্রতিদিন রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
  2. দৈনিক রাতের ঘুমের চাহিদা অবশ্যই পূরণ করতে হবে।
  3. খুব সকালে ঘুম থেকে উঠার চেষ্টা করতে হবে।
  4. সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছু শারীরিক ব্যায়াম করলে ভাল হয়।
  5. ঘুমানোর সময় নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে ওঠার জন্য এলার্ম দেওয়া যায়।

রাতে ঘুমানোর সঠিক সময় কখন

ঘুমানোর সঠিক সময় বলতে রাত ও দিন দুটোই হতে পারে। সকল কাজের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা থাকে। তেমনি ভাবে ঘুমেরও নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। অবশ্যই আমাদের সেই নির্দিষ্ট সময় মেনে ঘুমানো উচিত। সেজন্য আমাদের সকলকেই রাতে ঘুমানো সঠিক সময় কখন সেটি জেনে রাখতে হবে। অতিরিক্ত ঘুমালে কি ক্ষতি হয় এ বিষয়টি যেমন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

ঠিক তেমনি রাতে ঘুমানোর সঠিক সময় জানাও প্রয়োজন। চলুন এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। ঘুমানোর সঠিক সময় নিয়ে কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, রাতে ঘুমানোর সবচেয়ে আদর্শ এবং সঠিক সময় হল রাত ১০:০০ টা থেকে ১১ঃ০০ টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়া। এতে আমাদের ঘুমাতে যাওয়ার সময়ও ঠিক থাকবে। তার পাশাপাশি আমাদের যে পরিমাণ ঘুম প্রয়োজন তার চাহিদা মিটবে। রাত ১০:০০ টা থেকে ১১ঃ০০ টার মধ্যে শরীর রোগাক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে রেহাই পায়।

অতিরিক্ত ঘুমালে কি ক্ষতি হয়

আমরা অনেকেই অতিরিক্ত ঘুমাতে পছন্দ করে থাকি। অতিরিক্ত ঘুম আমাদের শরীরের যেমন ক্ষতি করে ঠিক তেমনি আমাদের কাজেরও ব্যঘাত ঘটায়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি যখন দৈনিক 8 থেকে 9 ঘণ্টার বেশি সময় ঘুমায় তাহলে সেই অতিরিক্ত সময়ের ঘুমকে অতিরিক্ত ঘুম হিসেবে বিবেচিত করা হয়। একজন ব্যক্তি যখন অতিরিক্ত পরিমাণে ঘুমায় সেই ঘুমকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটি রোগ হিসেবেও দেখা হয়ে থাকে। চিকিৎসকদের ভাষায় এই রোগটিকে হাইপারসোমনিয়া রোগ বলা হয়ে থাকে। 
অতিরিক্ত ঘুমকে হাইপারসোমনিয়া রোগ হিসেবে তখনই ধরা হয় যখন কোন ব্যক্তি এই সমস্যায় অনেক দিন ধরে ভুগতে থাকে। তবে যারা বিভিন্ন কারণে অতিরিক্ত ঘুম আসার সমস্যাটিতে ভুগছেন। যেমন ঘুমের চাহিদা পূরণ না হওয়া, শরীর দুর্বল থাকা, শরীরে পুষ্টির অভাব ইত্যাদি তাদের অতিরিক্ত ঘুমকে হাইপারসোমনিয়া রোগ হিসেবে ধরা হয় না। এবার তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক অতিরিক্ত ঘুমালে কি ক্ষতি হয়।
  • অতিরিক্ত ঘুমানোর ফলে যে সকল ক্ষতি হতে পারে তার মধ্যে একটি হলো স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বৃদ্ধি পায়।
  • অতিরিক্ত ঘুমানোর ফলে আমাদের শরীরে ক্যালোরি এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর দিক।
  • আমরা যদি সব সময় অতিরিক্ত পরিমাণে ঘুমাতে থাকে তাহলে সেটি আমাদের শরীরের মেদ এবং ওজন বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
  • কখনো কখনো অতিরিক্ত ঘুমের ফলে শরীর অনেকটাই দুর্বল বোধ হয়।
  • আয়ু কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • শরীরে ডায়াবেটিস রোগ আক্রান্ত হয়ে থাকে।
  • অতিরিক্ত ঘুমানোর ফলে খাবারের প্রতি অরুচি ভাব এবং ক্ষুধা মন্দা দেখা দিয়ে থাকে।

প্রতিদিন কমপক্ষে কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত

এর আগে আমরা জানলাম অতিরিক্ত ঘুমালে কি ক্ষতি হয় সম্পর্কে। এখন আমরা জানবো প্রতিদিন কমপক্ষে কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত। এ বিষয়টি অনেকেরই বেশ অজানা আবার অনেকেই এই সম্পর্কে জানার প্রচুর চেষ্টাও করে থাকেন এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তিকে দৈনিক 7 থেকে 8 ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। আর যদি সেই ব্যক্তি প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে শারীরিক পরিশ্রম করে থাকে তাহলে তার ক্ষেত্রে, 

দৈনিক 7 থেকে 8 ঘন্টা ঘুমানোর পরিবর্তে ঘুমানোর সময় পরিমাণ দুই এক ঘন্টা বাড়িয়ে দেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে দৈনিক 8 থেকে 9 ঘন্টা ঘুমানো যেতে পারে। তবে আমরা যদি দৈনিক এর চেয়ে বেশি সময় ধরে ঘুমাই তাহলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিবে। আশা করি আপনারা সকলে বুঝতে পেরেছেন একজন ব্যক্তিকে প্রতিদিন কমপক্ষে কত ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন।

অতিরিক্ত ঘুম কোন রোগের লক্ষণ

অতিরিক্ত ঘুমানো অবশ্যই আমাদের শরীরের জন্য একটি ক্ষতির দিক। কারণ অতিরিক্ত কোন কিছুই আমাদের জন্য ভালো নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঘুম কোন কোন রোগের লক্ষণ হিসেবেও প্রকাশ পায়। অতিরিক্ত ঘুমালে কি ক্ষতি হয়? এই বিষয়টি জানার পাশাপাশি আমাদেরকে অবশ্যই জেনে রাখতে হবে অতিরিক্ত ঘুম কোন রোগের লক্ষণ হয়ে থাকে? চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
অতিরিক্ত পরিমাণে ডিপ্রেশন এর কারণে হতে পারে অতিরিক্ত ঘুম। বৃক্ক বা কিডনির যেকোনো সমস্যা হওয়ার কারণে অতিরিক্ত ঘুম পেয়ে থাকে। আবার লিভারের যেকোনো সমস্যা হওয়ার ফলেও মাত্রা অতিরিক্ত ঘুম অতিরিক্ত ঘুমকেও চিকিৎসকের ভাষায় একটি রোগ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। যার নাম হল হাইপারসোমনিয়া রোগ বলা হয়ে থাকে। রক্তশূন্যতা রোগের কারণেও অতিরিক্ত পরিমাণে ঘুম আসে।

আবার রক্তে লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রা কম থাকার কারণেও অতিরিক্ত ঘুম পেয়ে থাকে। শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান। যেমন: আয়রন, ভিটামিন, ভিটামিন বি ১২ এগুলোর অভাবজনিত কারণে অতিরিক্ত ঘুম পেয়ে থাকে। আমাদের গলায় এক ধরনের থাইরয়েড গ্রন্থি অবস্থান করে। সেই থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে হরমোন নিঃসৃত হয়ে থাকে। এই হরমোনকে থাইরয়েড হরমোন বলা হয়। আমাদের শরীরে এই থাইরয়েড হরমনের ঘাটতি দেখা দিলে ঘুমের প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ হয়ে থাকে।

কোন বয়সে কত ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন

বয়সের পার্থক্যের পাশাপাশি যেমন কাজের ধরন, খাবার গ্রহণ, শারীরিক পরিশ্রম ইত্যাদির পার্থক্য রয়েছে। ঠিক তেমনি ঘুমের পরিমাণেরও পার্থক্য অবশ্যই রয়েছে। কোন বয়সে কত ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন সেটি আমাদের সকলেরই জেনে রাখা উচিত। তাই আমি আমার অতিরিক্ত ঘুমালে কি ক্ষতি হয় সম্পর্কিত আর্টিকেলটিতে উক্ত বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
বয়স ঘুমের প্রয়োজন(সময়)
নবজাতক শিশু ৩ মাস ১৪ থেকে ১৭ ঘন্টা
৪ থেকে ১১ মাস বয়সের শিশু ১০ ঘন্টা থেকে ১৮ ঘন্টা
৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু ১০ ঘন্টা থেকে ১৩ ঘন্টা
৬ থেকে ১৩ বছর ৯ ঘন্টা থেকে ১০ ঘন্টা
১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সিদের জন্য ৮ ঘন্টা থেকে ১০ ঘন্টা
১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সিদের ৭ ঘন্টা থেকে ৯ ঘন্টা
২৬ থেকে ৬৪ বছর ৭ ঘন্টা থেকে ৯ ঘন্টা
৬৫ বছর থেকে এর উপরে ৭ ঘন্টা থেকে ৮ ঘন্টা

লেখক এর শেষ মন্তব্য

যারা মনে করেন অতিরিক্ত ঘুমালে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে এটি একেবারেই ভুল ধারণা। যদি আমরা অতিরিক্ত পরিমাণে ঘুমিয়ে থাকি তাহলে এটি আমাদের স্বাস্থ্যের উপকার করার পরিবর্তে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে এবং রোগ বালাইকে আমাদের শরীরে বাসা বাঁধতে সহায়তা করবে। আশা করি আপনারা সকলেই আমার সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে সকালে অতিরিক্ত ঘুমালে কি ক্ষতি হয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। 

আশা করি আমার আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা কিছুটা উপকৃত হয়েছেন। আমার আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে ভালো লেগে থাকলে বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url